রাজধানীতে সংঘর্ষের পর সারাদেশে জাতীয় পার্টির অফিসগুলোর অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণায় রংপুর জাতীয় পার্টি অফিসে অবস্থান নিয়েছে নেতাকর্মীরা।
শনিবার (৩০ মার্চ) বেলা ১১টা থেকে নগরীর পায়রা চত্বরে পার্টি অফিসের সামনে অবস্থান নিয়েছেন নেতাকর্মীরা। সেখানে কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগর জাপার শীর্ষ নেতারা অংশ নিয়েছে।
এছাড়া নেতাকর্মীরা অফিসের আশেপাশে অবস্থান নিয়েছেন। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও গণমাধ্যম কর্মীরাও আছেন সেখানে।
এ সময় সেখানে উপস্থিত নেতারা জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কোনো অবস্থানেই নেই জাতীয় পার্টি। আমাদের অফিসে এসে ঝামেলা করার চেষ্টা করা হলে সেটা আমরা প্রতিরোধ করব। রাজধানীতে মব প্রতিহত করতে ভিপি নুরসহ অন্যদের ওপর যে হামলা হয়েছে সেটা সেনাবাহিনী ও পুলিশ করেছে। এর সাথে জাতীয় পার্টির কোনো সম্পর্ক নেই।
অবস্থান নেয়া রংপুর জেলা জাতীয় ছাত্র সমাজের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আরিফ জানান, ‘গণঅধিকার পরিষদে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগকে প্রমোট করেছে তারা। কিন্তু দায়সারা হিসেবে জাতীয় পার্টির ওপর দোষ চাপানোর একটা চেষ্টা করা হচ্ছে। গতকালকের (শুক্রবারের) রাজধানীর যে ঘটনাটা। আমার বাড়িতে আমি থাকব। আমার বাড়িতে কেউ যদি এসে হামলা করে সেটা কি আমি প্রটেক্ট করবো না? আমরা ভিডিওতে দেখেছি। বাংলাদেশে সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী বহু চেষ্টা করেছে তাদেরকে ওখান থেকে দূরে সরানোর জন্য। ফিনিশিংয়ে ১০ মিনিট যখন সময় দিল। তখন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা সেনাবাহিনীর ওপর হামলা করেছে। সেনাবাহিনী তাদের আত্মরক্ষার জন্য যেটা করা দরকার সেটা করেছে। আমাদের প্রশ্ন এই গণঅধিকার পরিষদ মব করতে গিয়ে এরা সেনাবাহিনীকে মানে না, পুলিশ মানে না। তারা আসলে মানেটা কাকে?
রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান আনিছ বলেন, ‘আজকের অবস্থানের মূল কারণ হলো আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে রাতেই জানতে পারি, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন সারাদেশের জাতীয় পাটি অফিসগুলো অভিমুখে লংমার্চ ঘোষণা করেছে। যেহেতু জাতীয় পার্টি একটা নিবন্ধিত দল। দেশের ক্ষমতায় ছিল, এমন তিনটা দলের মধ্যে একটা শক্তিশালী দল। ওরা যদি আমাদের অফিস এসে ভাঙচুর করে। আমরা যদি সেটা প্রতিহত করতে না পারি, সেটা হবে জাতীয় পার্টির জন্য একটা কলঙ্কজনক অধ্যায়। কেউ যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে। সেজন্য আমাদের এই অবস্থান। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের বিক্ষোভ বা অন্য কোনো কর্মসূচি নাই। অফিসে আসলে প্রতিহত করব। এজন্যই অবস্থান প্রোগ্রাম।’
অবস্থান কর্মসূচি অংশ নেয়া জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর জেলা যুবসংহতি সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিম জানান, ‘ভিপি নুর আমাদের ওপর অন্যায়ভাবে আক্রমণাত্মক ব্যবহার করছে। এর আগেও করেছে। গতকালও করেছে। কোথা থেকে সে এই সাহস পেল। সেটাও আমরা জানতে চাই। আমরা আক্রমণ করিনি। তারা আক্রমণ করেছে। পিকআপ করে ইটপাটকেল নিয়ে এসে আমাদের দলীয় কার্যালয়ে ঢিলাঢিলি করছে। আমাদের পাঁচ থেকে সাতজন গুরুতর আহত। আমরা হামলা করিনি। আমরা প্রতিহত করেছি। প্রশাসন দেখেছে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের পার্টি অফিস অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। তাহলে তো প্রশাসন তো তাদেরকে সরিয়ে দেবে। সরিয়ে দেয়ার মাঝে যদি প্রশাসন কিছু করে থাকে। সেটা প্রশাসনের ব্যাপার। ‘
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়া প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর মহানগর সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টির কোনো সম্পর্ক নাই। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা জাতীয় পার্টিকে ছিন্নি বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। রওশন এরশাদ, ব্যারিস্টার আনিছুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু এবং রুহুল আমিন হাওলাদারকে দিয়ে জি এম কাদেরের পেছনে লাগিয়েছে। এরশাদ সাহেবের পেছনে লাগিয়েছে। আমাদের সাথে আওয়ামী লীগ বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। আমরা এই সরকারের কাছেও সেই আচরণ দেখছি।’
ইয়াসির বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে বা বিপক্ষে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না জাতী পার্টির। আমরা স্বাধীন একটা রাজনৈতিক দল। এরশাদের আদর্শে আমরা রাজনীতি করি। তার আদর্শ নিয়েই আমরা বেঁচে থাকতে চাই। তার কর্মকাণ্ড আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই। বাংলাদেশের নিপীড়িত মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে চাই। কেউ যদি আমাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে, কণ্ঠ রোধ করতে চায়। তাহলে সেটা আমরা প্রতিরোধ করব। সেজন্য আমাদের এই অবস্থান।