সালাম না দেওয়ায় জুনিয়রদের রোদে দাঁড় করিয়ে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ

সালাম না দেওয়ায় ঢাকা কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের হাতে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) কলেজের কেন্দ্রীয় মাঠে গ্যালারির পেছনে এ ঘটনা ঘটে। ৫ আগস্টের ছাত্র-আন্দোলনের পর এই ‘অপ কালচার’ বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে নতুন করে র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থীরা ২০২৩-২৪ সেশনের জুনিয়রদের তীব্র রোদে দাঁড় করিয়ে রেখে অপমানজনক আচরণ করেন। এ সময় দ্বিতীয় বর্ষের কয়েকজন গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে জুনিয়রদের উদ্দেশে আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, মাঠের পূর্ব পাশে জুনিয়রদের ডেকে এনে উত্তপ্ত রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। দূর থেকে একজন শিক্ষার্থী ছবি তুলে মোবাইলে অডিও রেকর্ড চালু করে কথোপকথন ধারণ করেন। সেই রেকর্ডে শোনা যায়, এক সিনিয়র বলেন, ‘আমি যখন সামনে দাঁড়াইতেছিলাম সবাই বাইর হইছোস, আমারে সালাম দিস নাই।’ পাশ থেকে আরেকজন বলেন, ‘সালাম দিছোস? তোরা ওগোরে দেখে কাল সালাম দিস নাই, কে কে হাত তোল?’ তখন এক জুনিয়র বলেন, ‘বাইরে আছে।’ উত্তরে এক সিনিয়র বলেন, ‘তিন দিন আগে ডাকাইছি, আসে না ক্যান? তোদের কি ডিপার্টমেন্টে পড়ার ইচ্ছে আছে?’ এরপর আরও হুমকি-ধমকি ও অপমানজনক কথা শোনা যায়।

পরিসংখ্যান বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী নিশ্চিত করেছেন, রেকর্ডে শোনা যাওয়া কণ্ঠ দ্বিতীয় বর্ষের সি-আর নাইমুর রহমান মুল্লার। আরেকজন, তরিকুল রিমন, এ ঘটনায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। জানা গেছে, এর আগেও দুই দিন ধরে সি-আর-এর মাধ্যমে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে ডেকে অপমান করা হয়। দরজা বন্ধ করে কথিত ম্যানার শেখানোর নামে খারাপ আচরণ করা হয়। এমনকি ১৩ মিনিটের আরেকটি রেকর্ডে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও শোনা যায়।

ভুক্তভোগী ২০২৩-২৪ সেশনের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রায়ই আমাদের র‌্যাগিং দেওয়া হয়। আমরা ভয়ে কিছু বলতে পারি না।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মুশফিকুর রহিম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি ক্লাসে যাচ্ছিলাম তখন মাঠে এই দৃশ্য টা চোখে পড়ে। কিন্তু হচ্ছিলটা কি সেটা জানার আগ্রহ থাকলেও শুধু তাকিয়ে ছিলাম, কারা এরা? কাউকেই চিনি না, পরে মনে হলো বহিরাগতরা হয়ত খেলতে এসেছে। যাই হোক বিষয় টা এখন পরিষ্কার, এদের মধ্যে একজন কালো শার্ট পড়া সামনে থেকে আঙুল তুলে তুলে কথা বলতেছিল মনে হচ্ছে সেই এই কান্ডের মহা নায়ক। এসবের উপযুক্ত বিচার না হলে আগামীতে আরো দৃশ্য দেখা যাবে।’

এ বিষয়ে পরিসংখ্যাণ বিভাগের ২০২৩-২৪ সেশনের সি-আর আব্দুর রহমান বলেন, ‘সামনে আমাদের পরীক্ষা তাই বড় ভাইয়েরা পুকুর পাড় থেকে ডেকে পরামর্শ দিচ্ছিল। আর ছাঁয়া রোদ কোনো বিষয় না, ওখানে জায়গা কম ছিল। সিনিয়রদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো। আমরা তাদেরকে সালামও দিই।’ তবে সেখানে সিনিয়ররা কারা কারা ছিল? তাদের নাম কি কি? এই বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুর রহমান ফোন কেটে দেন।

র‌্যাগিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজ পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোঃ শফিক নেওয়াজ তালুকদার বলেন, ‘এটা র‌্যাগিং কিনা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। তাদের নিজেদের মধ্যে সমস্যা হয়েছে। শিক্ষকরা তাদের বিষয়টি জানার চেষ্টা করছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, ‘বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ডেকে আনার জন্য পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকে জানিয়েছি। বিভাগীয় প্রধান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’