ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে (ডাকসু) ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক প্রার্থী রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা। টিএসসিতে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম এবং জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের পাশে আগে থেকেই ক্রস দেয়া ব্যালট বিতরণের অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সময় সংবাদকে শ্রেষ্ঠা বলেন, টিএসসির কেন্দ্রে আমার এক বন্ধু ভোট দিতে আসে। সে ১ নম্বর টেবিল থেকে ব্যালট পেপার নেয়। নেয়ার পর কেন্দ্রে প্রবেশের আগেই সে দেখে যে, ব্যালটে সাদিক কায়েম এবং এস এম ফরহাদের জায়গায় ক্রস দেয়া। এরপর সে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসা করলে উল্টো তাকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ওই সময় একই অভিযোগ করেছেন প্রতিরোধ পর্ষদের জিএস পদপ্রার্থী মেঘমল্লার বসুও। অমর একুশে হলেও ভোট কারচুপির অভিযোগ করেছেন এই প্রার্থী। এ ধরনের অভিযোগ সত্য হলে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মেঘমল্লার।
নিরাপত্তাজনিত কারণে টিএসসি কেন্দ্রের অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর নাম প্রকাশ করতে চাননি শ্রেষ্ঠা। তবে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়েছে সময় সংবাদের। তিনি বলেন, টিএসসির ওই কেন্দ্রে আমার টেবিল নম্বর ছিল ১। সেখান থেকে ব্যালট নিয়েছি। প্রথমে দেখিনি ব্যালটে কী আছে। বুথে ঢুকে দেখি, সাদিক কায়েম এবং ফরহাদের নামের পাশে ক্রস দেয়া। তারপর বের হয়ে এসে কর্মকর্তাদের বললে তারা আমাকে কিছুটা জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে আরেকটি ব্যালট দেন ভোট দেয়ার জন্য।
টিএসসি কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা অবশ্য অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘১০টার পরপর এই ঘটনা ঘটে। পোলিং অফিসারদের কাছ থেকে যতটুকু জেনেছি, অভিযোগকারী ওই শিক্ষার্থী ব্যালট নিয়ে বুথে গিয়েছিল। এক-দেড় মিনিট পর বেরিয়ে এসে সে অভিযোগ করে যে তার ব্যালটে দুটি ভোট দেয়া ছিল। আমি এসে বিষয়টা ভেরিফাই করার চেষ্টা করেছি।’
যদি এমন কিছু হয়ে থাকে একটি ব্যালটে হওয়ার কথা না। আমি অনেকগুলো ব্যালট চেক করে দেখলাম এরকম ঘটনা আর নেই। তাতক্ষণিকভাবে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গেও যোগাযোগ করি। যেহেতু ব্যালট নিয়ে ইস্যুর অভিযোগ ওঠে, তাই আবার একটি ব্যালট নিয়ে তাকে ভোট দেয়ার সুযোগ দিয়েছি। এরপরেও অভিযোগ যেহেতু উঠেছে, ওই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বিষয়টা যাচাই করে দেখব।
টিএসসি কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা অবশ্য অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘১০টার পরপর এই ঘটনা ঘটে। পোলিং অফিসারদের কাছ থেকে যতটুকু জেনেছি, অভিযোগকারী ওই শিক্ষার্থী ব্যালট নিয়ে বুথে গিয়েছিল। এক-দেড় মিনিট পর বেরিয়ে এসে সে অভিযোগ করে যে তার ব্যালটে দুটি ভোট দেয়া ছিল। আমি এসে বিষয়টা ভেরিফাই করার চেষ্টা করেছি।’
‘যদি এমন কিছু হয়ে থাকে একটি ব্যালটে হওয়ার কথা না। আমি অনেকগুলো ব্যালট চেক করে দেখলাম এরকম ঘটনা আর নেই। তাতক্ষণিকভাবে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গেও যোগাযোগ করি। যেহেতু ব্যালট নিয়ে ইস্যুর অভিযোগ ওঠে, তাই আবার একটি ব্যালট নিয়ে তাকে ভোট দেয়ার সুযোগ দিয়েছি। এরপরেও অভিযোগ যেহেতু উঠেছে, ওই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বিষয়টা যাচাই করে দেখব।’
এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আটটি কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে ডাকসু এবং হল সংসদে শিক্ষার্থীদের ভোটগ্রহণ করা হবে।
এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। পাঁচ ছাত্রী হলে ১৮ হাজার ৯৫৯ ভোটের বিপরীতে ১৩ ছাত্র হলে এই সংখ্যা ২০ হাজার ৯১৫ জন।
ডাকসুতে ২৮টি পদের জন্য মোট ৪৭১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। প্রতি হল সংসদে ১৩টি করে ১৮টি হলে মোট পদের সংখ্যা ২৩৪টি। এসব পদে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন ১ হাজার ৩৫ জন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এবার ভোটারদের ৪১টি ভোট দিতে হবে।
এবারের ডাকসু ভোটে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলিয়ে অন্তত ১০টি প্যানেল অংশ নিয়েছে। এর বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন প্রার্থীদের আরেকটি অংশ।
এবারের নির্বাচনে রয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জুলাই আন্দোলনের চেতনা ধারণ করে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), সাতটি বাম ছাত্র সংগঠনের ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’, জুলাই আন্দোলনের নেত্রী উমামা ফাতেমার ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’, ছাত্রশিবির, তিন বাম সংগঠনের ‘অপরাজেয় ৭১, অদম্য ২৪’, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনসহ অন্তত ১০টি প্যানেল।
ভিপি পদে মনোনীত আবিদুল ইসলাম খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জিএস পদে শেখ তানভীর বারী হামিম সম্প্রতি ঘোষিত কবি জসীম উদ্দীন হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আর এজিএস পদের তানভীর আল হাদী মায়েদ বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েমকে ডাকসুতে ভিপি প্রার্থী করেছে ছাত্রশিবির। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন। জিএস পদে ছাত্রশিবিরের প্রার্থী এস এম ফরহাদ এখন সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি। ছাত্রশিবির মনোনীত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের এজিএস প্রার্থী মুহা. মহিউদ্দীন খান সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক।
বাগছাসের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের এবং এজিএস প্রার্থী আবু বাকের মজমুদার। এ প্যানেলের এজিএস প্রার্থী আশরেফা খাতুনও জুলাই আন্দোলন সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন। এখন তিনি বাগছাসের মুখপাত্র।
সাতটি বাম ছাত্র সংগঠন মনোনীত ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ তাদের ভিপি প্রার্থী করেছে শেখ তাসনীম্ আফরোজ ইমিকে। জিএস প্রার্থী করেছে ছাত্র ইউনিয়ন একাংশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসুকে। আর এজিএস পদে প্রার্থী জাবির আহমেদ জুবেল বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের থেকে বাছাই করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ নামে প্যানেল গড়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা। এই প্যানেলে জিএস প্রার্থী আল সাদী ভূঁইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি। উমামার প্যানেলের এজিএস প্রার্থী জাহেদ আহমদ পাঠচক্রের প্ল্যাটফর্ম ‘গুরুভার আড্ডা’র সংগঠক।
ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের একাংশ এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল-বাংলাদেশ জাসদ) নিয়ে ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ প্যানেল ১৩ জন প্রার্থী দিয়েছে।
এ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী নাইম হাসান হৃদয় বিসিএল-জাসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি। ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক এনামুল হাসান অনয় এ প্যানেলের জিএস এবং ছাত্রফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব অদিতি ইসলাম এজিএস প্রার্থী।
ভিন্নধর্মী ইশতেহার দিয়ে এবার ভোটের মাঠে আলোচনা তৈরি করেছেন ভিপি পদপ্রার্থী শামীম হোসেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী; থাকেন বিজয় একাত্তর হলে। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ এবার ভিপি প্রার্থী করেছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাকে। জিএস হিসেবে সাবিনা ইয়াসমিনকে এবং এজিএস পদে লড়ছেন ছাত্র অধিকারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব রাকিবুল ইসলাম।