ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল সংসদ নির্বাচনের শীর্ষ ৫৪ পদের ৫৩টিতে জয় পেয়েছেন ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীরা; একটিতে জয় পেয়েছেন ছাত্রদল মনোনীত প্রার্থী।
তবে ‘স্বতন্ত্র’ হিসেবে জয় পাওয়া ‘অধিকাংশ’ প্রার্থীকে নিজেদের নেতাকর্মী দাবি করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির।
এবার ১৮টি হল সংসদেরর মধ্যে প্যানেল দেয় শুধু ছাত্রদল। এর বাইরে জগন্নাথ হলে ‘শহীদ জগৎজ্যোতি ব্রিগেড নামে প্যানেল দিয়েছিল ছাত্র ইউনিয়ন (মেঘমল্লার–মাঈন)। তবে শীর্ষ পদগুলোতে তারা জয় পায়নি।
প্রতিটি হল সংসদে ১৩টি করে পদে নির্বাচন হয়েছে। ১৮টি আবাসিক হলে ভিপি, জিএস, এজিএসসহ মোট পদ ২৩৪টি। এসব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১ হাজার ৩৫ জন।
এর মধ্যে ভিপি (সহসভাপতি), জিএস (সাধারণ সম্পাদক) ও এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদ ছিল ৫৪টি।
ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুধু জগন্নাথ হলের ভিপি পদে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের প্রার্থী জয় পেয়েছেন। বাকিগুলো গেছে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীদের দখলে।
মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি কেন্দ্রে ডাকসু ও হল সংসদের ভোট হয়।
ভোট গণনা শেষে সেদিন মধ্যরাতে ঘোষণা করা হয় হল সংসদ নির্বাচনের ফল; ডাকসুর ফল ঘোষণা করা হয় পরের দিন সকালে।
হল সংসদে বিজয়ী অনেক প্রার্থী ‘স্বতন্ত্র’ পরিচয়ে দাঁড়ালেও তাদের প্রতি ছাত্রশিবিরের সমর্থন ছিল বলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে।
ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে বিজয়ী অন্তত ১০ জন প্রার্থীও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে ছাত্রশিবিরের সমর্থন থাকার কথা বলেছেন। একই ধরনের বক্তব্য এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের তরফেও।
বিজয় একাত্তর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সায়েদ হোসেন সাদ বলেন, “এবার হল সংসদে যারা ‘স্বতন্ত্র’ নির্বাচন করেছেন, তাদের অনেকেই ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী। তাদেরকে ছাত্রশিবির সমর্থন দিয়েছে।”
হাজী মুহম্মদ মুহসিন হলে ‘স্বতন্ত্র’ হিসেবে জিএস পদে বিজয়ী হয়েছেন রাফিদ হাসান সাফওয়ান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি ছাত্রশিবির করি। তাই ছাত্রশিবিরের সমর্থন পেয়েছি। পাশাপাশি ‘অরাজনৈতিক’ শিক্ষার্থীরা আমাকে সমর্থন দিয়েছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুহা. মহিউদ্দিন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছেলেদের হলে যারা জয়ী হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী।
“তবে আমরা কয়েকটি জায়গায়, যেখানে আমাদের নেতাকর্মী দেওয়া সম্ভব হয়নি, সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছি। ফলে আমাদের সমর্থক ও নেতাকর্মীদের অধিকাংশ বিজয়ী হয়েছেন।”
ছেলেদের হলে ভিপি জিএস এজিএস হলেন যারা
>> স্যার এ এফ রহমান হলে ভিপি পদে রফিকুল ইসলাম, জিএস পদে হাবিব উল্লাহ ও এজিএস পদে আব্দুল্লাহ আল জুবাইর নির্বাচিত হয়েছেন।
>> হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল সংসদে শীর্ষ তিন পদে জিতেছেন সাদিক সিকদার, রাফিদ হাসান সাফওয়ান ও আব্দুল মজিদ।
>> শেখ মুজিবুর রহমান হলে মো. মুসলেমুর রহমান, জিএস পদে আহমেদ আল সাবাহ ও এজিএস পদে মুশফিক তাজওয়ার মাহি নির্বাচিত হয়েছেন।
>> শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে আহসান হাবিব ইমরোজ, খালেদ হোসেন ফারহাজ বিন নুর নিশাত জয় পেয়েছেন।
>> সূর্যসেন হলে আজিজুল হক, মোখলেছুর রহমান জাবির ও মো. রিয়াজউদ্দীন সাকিব।
>> বিজয় একাত্তর হলে হাসান আল বান্নাহ, আশিক বিল্লাহ ও ইমরান হোসাইন।
>> মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে মো. মহিউদ্দিন, আসিফ ইমাম ও মো. ফোজায়েল আহমেদ।
>> কবি জসিমউদ্দীন হলে মুহাম্মদ ওসমান গনী, মাসুম আবদুল্লাহ ও হিজবুল্লাহ আল হিজুল জয়ী হয়েছেন।
>> জগন্নাথ হলে পল্লব চন্দ্র বর্মন, সুদীপ্ত প্রামাণিক ও জয় সরকার দীপ্ত।
>> অমর একুশে হলে ভিপি পদে রবিউল ইসলাম, জিএস পদে মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম ও এজিএস পদে উবায়দুর রহমান হাসিব।
>> সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে মো. জায়েদুল হক জায়েদ, সাদমান আবদুল্লাহ ও শাহিন আলম।
>> ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ভিপি পদে তারেকুল ইসলাম তারেক, জিএস পদে তৌকির হাসান ও এজিএস পদে ইব্রাহিম খলিল।
>> ফজলুল হক মুসলিম হলে ভিপি পদে খন্দকার মো. আবু নাঈম, জিএস পদে ইমামুল হাসান ও এজিএস পদে মহসিন শাফী জয়ী হয়েছেন।
মেয়েদের হলে নেতা হলেন যারা
>> শামসুন্নাহার হলে ভিপি পদে কুররাতুল আইন কানিজ, জিএস পদে সামিয়া মাসুদ মম ও এজিএস পদে নূরে জান্নাত সুজানা।
>> বঙ্গমাতা হলে তাসনিম আক্তার আলিফ নাবিলা, মিফতাহুল জান্নাত রিফাত ও রূপা আক্তার।
>> রোকেয়া হলে ফাতেমাতুল জান্নাত ইমা, সিনথিয়া মেহরিন সকাল ও আদিবা সাইমা খান।
>> কুয়েত মৈত্রী হলে রাফিয়া রহমান হৃদি, নিশিতা জামান নিহা ও তানজিনা তামিম হাফসা।
>> কবি সুফিয়া কামাল হলে ভিপি পদে সানজানা চৌধুরী রাত্রি, জিএস পদে রুকু খাতুন ও এজিএস পদে শিমু আক্তার জয়ী হয়েছেন।