ভোজ্য তেলের দাম এখন লাগামহীন। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কারণে ভোজ্য তেলের বাজারে চলছে অস্থিরতা, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বাজারে। এ অবস্থায়, তেল উৎপাদন ও সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো দাম বাড়ানোর জন্য সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। তবে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাব এখনও অনুমোদন করেনি, কারণ তারা মনে করছে এই দাম গ্রহণযোগ্য নয়।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভোজ্য তেলের উৎপাদন এবং সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় দাম বেড়েছে। সয়াবিন তেল: আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের মতো প্রধান সয়াবিন রপ্তানিকারক দেশগুলোতে তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এর কারণ হিসেবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
পাম তেল: ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ায় পাম তেলের দাম বেড়েছে কারণ বিশ্বজুড়ে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সূর্যমুখী তেল: ইউক্রেনে সূর্যমুখী তেলের উৎপাদন কম হওয়ার পূর্বাভাসের কারণে দাম বেড়েছে।
দেশীয় বাজারে সংকট
আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতার পাশাপাশি আরও কিছু কারণে দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ছে এবং সংকট তৈরি হচ্ছে।
আমদানি কমেছে: ব্যাংকিং খাতে কিছু সীমাবদ্ধতা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি থাকায় সয়াবিন, পাম তেল এবং গম আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
আমদানি কর বৃদ্ধি: সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভোজ্য তেল আমদানিতে ১% উৎসে কর আরোপ করেছে, যা আগে ছিল না। এই সিদ্ধান্ত তেলের দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ব্যবসায়ীদের শঙ্কা: ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন যে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও যদি সরকার স্থানীয় বাজারে দাম না বাড়ায়, তবে তাদের বড় ধরনের লোকসান হবে। এই ভয়ে অনেক ব্যবসায়ী আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন।
চট্টগ্রামের আমদানিকারকদের মতে, দেশে বছরে প্রায় ২৪ লাখ টন ভোজ্য তেলের প্রয়োজন হয়, কিন্তু গত দুই মাসে আমদানির বিপরীতে এলসি খোলা হয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। একই অবস্থা গমের ক্ষেত্রেও, যার ৮০ শতাংশেরও বেশি আমদানি করতে হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গমের সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায় এর আমদানি কমেছে।
ব্যবসায়ীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে যদি এই পরিস্থিতি চলতে থাকে এবং আমদানি স্বাভাবিক না হয়, তবে ভবিষ্যতে ভোজ্য তেল এবং গমের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বড় সংকট দেখা দিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, সরকার এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে দ্রুত সমন্বয় করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা জরুরি।