মন্ত্রিপাড়া থেকে আটক সেই মার্কিন নাগরিককে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য

সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার মিন্টো রোডে মন্ত্রিপাড়া পাড়ায় ঘোরাঘুরির সময় আটক হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার মিন্টো রোডে মন্ত্রিপাড়ায় ঘোরাঘুরির সময় আটক সেই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে ৫ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। তার সহযোগী হিসেবে গোলাম মোস্তফা আজাদ নামে আরেকজনকেও পাঠানো হয়েছে কারাগারে।

সন্ত্রাস বিরোধী আইনের আওতায় রমনা মডেল থানায় মামলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। মামলার এজাহারে অভিযোগ আনা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতে অন্য দেশের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন তারা।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) এ মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে তাদেরকে আদালতে আনা হয়।

এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের রমনা জোনাল টিমের পরিদর্শক আক্তার মোর্শেদ মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামান তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

ঢাকার মিন্টো রোডের মন্ত্রীপাড়ায় গাড়িতে করে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরির সময় গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে আটক করা হয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে। বিকেলে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন রমনা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আজিজুল হাকিম।

ওইদিন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন। ওইদিন সকালে তাকে রমনা মডেল থানার এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বিকেলে তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার একটি আদালত।

পরে ১৬ সেপ্টেম্বর তার সহযোগী গোলাম মোস্তফা আজাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেই সহযোগী ও তার সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত প্রত্যেকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মিন্টো রোডের মন্ত্রিপাড়া এলাকায় প্রাডো গাড়িতে করে সন্দেহজনক চলাচল করতে দেখা যায় আসামি এনায়েত করিম চৌধুরীকে। এ সময় তার গাড়ি থামানো হয় এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি কোনও সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। তার কাছে পাওয়া ২টি আইনফোন জব্দ করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার ফোন বিশ্লেষণ করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম চৌধুরী জানান, বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক তিনি। গত ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে নিউইয়র্ক থেকে কাতার এয়ারওয়েজ যোগে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। একইসঙ্গে জানান, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার চুক্তি ভিত্তিক এজেন্ট। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের নিমিত্তে কাজ করার জন্য বাংলাদেশে এসেছেন বলে জানান তিনি।

এনায়েত করিম চৌধুরী গত ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থান করেন। পরবর্তী সময়ে গুলশানের বর্তমান ঠিকানায় অবস্থান করতে থাকেন। ইতোমধ্যে তিনি সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা, ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন বলে জানান।

তিনি আরও জানান, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমেরিকান সরকার হতাশ। আগামী ২১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় বাতিল করবেন বলে জানান তিনি। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে সেনাবাহিনী সমর্থিত নতুন জাতীয় সরকার, অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। নতুন এই সরকারে কারা অংশগ্রহণ করবেন এবং সরকারপ্রধান কে হবেন, তা আমেরিকা নির্ধারণ করে দেবে বলে জানান।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে সরকারি ও বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বর্তমান অবস্থান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করে তা নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতেন বলেও জানান তিনি।