জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপি ও জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আপনারা জনগণের দিকে তাকিয়ে হলেও এসব ভণ্ডামি বাদ দেন। নির্বাচন নিয়ে অযথা বিলম্ব করা হচ্ছে, এর মূল দায় বিএনপি ও জামায়াতের।
বিএনপি ও জামায়াতকে ভণ্ডামি বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের কারণে নির্বাচন বিলম্বিত হচ্ছে। তাদের ভণ্ডামি বাদ দিয়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বৈঠকে বসে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বিএনপি ৫০-১০০ আসনের বেশি পাবে না বলেছিলাম, এখন অবস্থা আরও তলানিতে। দ্রুত বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এনসিপির ব্যানারে আসছে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বিএনপি ও জামায়াত এখনো জুলাই সনদের আইনি প্রক্রিয়ায় আসছে না, এটাই নির্বাচন বিলম্বের মূল কারণ। আমি বলব, জনগণের কাছে মাফ চেয়ে হলেও আপনারা এসব ভণ্ডামি বাদ দেন। জনগণের দিকে তাকিয়ে হলেও দ্রুত নির্বাচনে অংশ নিন, আইনি প্রক্রিয়ায় আসুন। দ্রব্যমূল্য, জনজীবনের দুর্ভোগ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান সবকিছু এখন সংকটপূর্ণ।
৩০০ আসনের মধ্যে ১৫০ আসনে এনসিপি জয় পাবে প্রত্যাশা করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, এনসিপি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে এবং সব আসনে জয়লাভের জন্য কাজ করবে।
‘আমরা বলেছিলাম ৩০০ আসনের জন্যই লড়বো। তবে বাস্তবতা অনুযায়ী ১৫০ আসন আমরা জয়ের মতো পরিস্থিতিতে আছি— কনফার্ম অবস্থায়,’ বলেন তিনি
তবে বিএনপি বা জামায়াত কতটি আসন পাবে, তা নির্ধারণ করবেন জনগণ, এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা একবার বলেছিলাম বিএনপি ৫০-১০০ এর বেশি পাবে না। এখন তো বাস্তবতা আরও খারাপ।
সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েও আশাবাদ
সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যদি ১৫০ আসন নিশ্চিত করতে পারি, আর বাকিদের সঙ্গে যদি সমন্বয় হয়, তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে পারি। নারীদের সংরক্ষিত আসন ও উচ্চকক্ষের হিসাবও এক্ষেত্রে যুক্ত করতে হবে।
এনসিপি প্রতীকে বড় জোট আসছে
প্রতীক নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এনসিপির আলাদা নাম থাকবে, এনসিপির প্রতীকেই থাকবে। অন্য দলের নাম বা মার্কা বিলীন হয়ে যাবে। এনসিপির ব্যানারে অনেকগুলো দল আসছে। ইনশাআল্লাহ বিগ টাইম একটা দল হতে যাচ্ছে। প্রবাসীদের ভোটাধিকারে নতুন অগ্রগতি।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ভোটের ক্ষেত্রে উনারা (ইসি) পাইলট করবেন— তখন থেকেই আমরা নাছোড়বান্দার মতো লেগে আছি। আমাদের প্রবাসী ভাইবোনদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পাইলটের মাধ্যমে কেউ ভোট দিতে পারবে, কেউ পারবে না— এটা কোনোভাবেই হবে না।
তিনি জানান, একটি ইতিবাচক দিক হলো, ইসি এরই মধ্যে নোটিশে জানিয়েছে, যেসব প্রবাসীর এনআইডি কার্ড আছে, তারা সবাই ভোট দিতে পারবেন।
পাসপোর্টধারীদের এনআইডি সহজীকরণ চেয়ে প্রস্তাব
এনআইডি না থাকলেও যাদের বৈধ পাসপোর্ট আছে, তাদের জন্য এনআইডি করাকে সহজ করার আহ্বান জানান তিনি।
‘অনেক প্রবাসী ভাইবোন আছেন যাদের পাসপোর্ট আছে, কিন্তু এনআইডি নেই। তাদের বায়োমেট্রিক দিতে হয় অনেক দূরে গিয়ে, অফিস থেকে ছুটি নিতে হয়, ভোগান্তি হয়। নির্বাচন কমিশনেরও খরচ হয়। আমরা বলেছি, যাদের পাসপোর্টে বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন রয়েছে, সেই ডেটা পুল করে যেন এনআইডি তৈরি করা যায়,’ বলেন পাটওয়ারী।
তিনি আরও বলেন, ‘যাদের পুরোনো এনআইডি আছে বা নতুন স্মার্ট এনআইডি আছে—দুই পক্ষকেই যেন ভোট দিতে দেওয়া হয়। পুরোনো এনআইডি থাকলেই যেন কেউ বঞ্চিত না হয়।’
‘পাসপোর্ট থাকলেই ভোটের অধিকার’ — দাবি এনসিপির
এনসিপির প্রস্তাব, যাদের এনআইডি নেই কিন্তু বৈধ পাসপোর্ট আছে এবং যাদের পাসপোর্টে বায়োমেট্রিক ডেটা আছে, তারা যেন ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।
‘অনেকে আছেন যাদের ২০০–৩০০ মাইল দূরে গিয়ে বায়োমেট্রিক দিতে হয়। এটা সমীচীন নয়। যেহেতু পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা হচ্ছে, তাই যাদের পাসপোর্ট আছে, তাদের আওতায় আনা হোক,’ বলেন তিনি।
নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে বলেও জানান তিনি।