হঠাৎ মৃত্যু থেকে বাঁচার যে দোয়া শিখিয়েছেন মহানবি (সা.)

মৃত্যু—এমন এক অমোঘ বাস্তবতা যা প্রত্যেক জীবিত প্রাণের জন্য অনিবার্য। তবে এই মৃত্যু কখন, কোথায়, কীভাবে আসবে, তা আমরা কেউই জানি না। যদি কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই হঠাৎ মৃত্যু আসে, বিশেষ করে পাপ বা গাফিলতির মধ্যে লিপ্ত অবস্থায়, তবে তা অনুতাপের এক বড় কারণ হতে পারে। কারণ হঠাৎ মৃত্যুতে তওবা, সংশোধনের অবকাশ বা কারও কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ থাকে না, ফলে তা আল্লাহর শাস্তির দ্বার উন্মোচন করতে পারে।

ইসলামী শরিয়তে তাই হঠাৎ মৃত্যুকে ‘আফসোসের পাকড়াও’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নবী করিম (সা.) নিজে উম্মতকে এই বিষয়ে সতর্ক করেছেন এবং এই মৃত্যু থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন। সাহাবি উবাইদ ইবনে খালিদ সালামি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, হঠাৎ মৃত্যু আফসোসের পাকড়াও স্বরূপ, যাতে মানুষ তাওবার সুযোগ পায় না। (সুনানে আবু দাউদ: ৩০৯৬)

অন্য এক হাদিসে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি গাধার মতো মৃত্যু পছন্দ করি না। জিজ্ঞেস করা হলো, গাধার মতো মৃত্যু কী? তিনি বললেন, হঠাৎ মৃত্যু। (জামে তিরমিজি: ৯৮০)

নবী করিম (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, কিয়ামতের একটি আলামত হলো—হঠাৎ মৃত্যু ব্যাপক হারে দেখা দেওয়া। (তাবারানি: ২৩৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) হঠাৎ মৃত্যুসহ নানা প্রকার বিপদ থেকে আশ্রয় চাওয়ার জন্য একটি বিশেষ দোয়া পাঠ করতেন, যা উম্মতকেও শেখাতেন। দোয়াটি হলো: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাদমি, ওয়া আউজুবিকা মিনাত তারাদ্দি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল গারাকি ওয়াল হারাকি ওয়াল হারামি, ওয়া আউজুবিকা আইয়াতাখাব্বাতানিশ শাইতানু ইংদাল মাওতি, ওয়া আউজুবিকা আন আমুতা ফি সাবিলিকা মুদবিরান, ওয়া আউজুবিকা আন আমুতা লাদি-গান।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই চাপা পড়ে, গহ্বরে পতিত হয়ে, পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে ও অতিবৃদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ থেকে। আমি আপনার আশ্রয় চাই মৃত্যুর সময় শয়তানের ধোঁকায় পড়া থেকে। আমি আশ্রয় চাই জিহাদ থেকে পলায়নরত অবস্থায় ও বিষাক্ত প্রাণীর কামড়ে মৃত্যুবরণ থেকে। (সুনান আবু দাউদ: ১৫৫২)

মৃত্যু আমাদের অনিবার্য ভবিষ্যৎ। তাই সব সময় ইমান ও আমলের ওপর দৃঢ় থাকা, আত্মসমালোচনায় মনোযোগী হওয়া এবং রাসুল (সা.) প্রদত্ত এই দোয়ার মাধ্যমে আন্তরিকতা সহকারে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়ার মাধ্যমেই প্রস্তুত থাকা উচিত।

Check Also

অন্য ধর্মাবলম্বীদের হাতে বানানো খাবার খাওয়া জায়েজ?

প্রশ্ন: আমি একজন কাঠমিস্ত্রি। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে মিস্ত্রির কাজ করি। কখনো কখনো হিন্দু বাড়িতেও কাজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *