মাতৃত্বকালীন ছুটির পাশাপাশি এবার পিতৃত্বকালীন ছুটিও মিলবে। তবে এর জন্য তিনটি শর্ত মানতে হবে। শিশুকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে, শিশুর যত্নে সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং প্রসূতি বা মা-কে সেবা দিতে হবে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত কর্মশালায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘কর্মশালায় অনেকেই পিতৃত্বকালীন ছুটির কথা বলেছেন। তবে মায়ের চোখে দেখি, যদি ছুটি নিতে হয়, সেখানে লিখিত শর্ত থাকা জরুরি। একজন পিতা কতক্ষণ শিশুকে দেখেছেন, বাচ্চার পেট পরিষ্কার করেছেন, মায়ের সেবা করেছেন, সবই লিখিতভাবে প্রমাণ করতে হবে।’
কর্মশালার আয়োজন করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ)। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘মাতৃদুগ্ধপানকে অগ্রাধিকার দিন, টেকসই সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলুন’।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষার সচিব ডা. সারোয়ার বারী বলেন, ‘কর্মজীবী মায়েদের জন্য শিশুদের দুগ্ধপান করানো চ্যালেঞ্জের কাজ। ডে কেয়ার নেই, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণও কম। অনেক দেশেই পিতৃত্বকালীন ছুটি আছে। আমরা অন্তত চার সপ্তাহের ছুটি প্রস্তাব করেছি, যা কেবিনেটে পাঠানো হয়েছে।’
বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস কে রায় বলেন, গত পাঁচ বছরে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর হার কমেছে। ২০১৭-২০১৮ সালে প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্র মায়ের দুধ খেয়েছে ৬৫ শতাংশ শিশু, কিন্তু ২০২২ সালে এই হার ৫৮ শতাংশে নেমেছে।
মায়ের দুধ না খেলে নবজাতকের মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। যেমন, জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে ৩১ শতাংশ শিশুর মৃত্যু, নিউমোনিয়ায় ১৫ গুণ, ডায়রিয়ায় ১১ গুণ এবং অপুষ্টি ও অন্যান্য কারণে ১৪ গুণ।
প্রতি শিশুর জন্য বার্ষিক গুঁড়াদুধের খরচ প্রায় ৭২,৩০৩ টাকা। ২০২৩-২৪ সালে জাতীয় আমদানি খরচ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। ৫৫ শতাংশ শিশু ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই ফর্মুলা দুধ খায়। হাসপাতালের শিশুদের মধ্যে এই হার ২০ শতাংশ।
বিবিএফ সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক সারিয়া তাসনিম বলেন, ৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ৫৭ শতাংশ স্বাস্থ্য পেশাজীবী আইন লঙ্ঘন করে অপ্রয়োজনীয়ভাবে গুঁড়াদুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন।
কর্মশালায় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আশরাফী আহমদ ও বক্তব্য রাখেন।