স্ত্রী-ছেলেসহ বিএনপি নেতার অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে পৌরসভার ৭ নাম্বার ওয়ার্ড দক্ষিণ কেরোয়া গ্রামের বিএনপির নেতা মাসুদ রানা দম্পত্তির অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে মাসুদসহ তার স্ত্রী ও ছেলের একের পর এক বেপরোয়া চাঁদাবাজি, হয়রানি, ভয়ভীতি দেখানো ও মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকালে ৭ নাম্বার ওয়ার্ডের যুব বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ রানাসহ তার স্ত্রী কুশুম আক্তার পৌর মহিলা দলের সহ-সভাপতি ও ছেলে যুবদলের সদস্য আকাশের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী, তাদের স্বজন ও প্রায় শতাধিক এলাকাবাসী।

ওই বিএনপি নেতা মাসুদসহ তার স্ত্রী ও ছেলেকে গ্রেফতারসহ শাস্তির দাবিতে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী পুলিশ সুপার ও থানা পুলিশের ওসির কাছে গণস্বাক্ষরে অভিযোগ করে এলাকাবাসী।

দক্ষিন কেরোয়া গ্রামের ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগে জানা যায়, রায়পুর পৌরসভার ৭ নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ রানা একজন চাঁদাবাজ, জমি দখলকারি, মাদক কারবারি ও দুশ্চরিত্র লোক। এসব অপরাধের জন্য কয়েকবার কারাভোগ করেন। সে দলের পরিচয় দিয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই বাড়ির সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। স্ত্রীর দ্বারা অতিষ্ঠ বাড়ি ও গ্রামের মানুষ।

আরও জানা যায়, ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর মাসুদ রানাসহ তার স্ত্রী ও ছেলে আকাশের বিরুদ্ধে একই এলাকার দিনমজুর মনুহারকে মারধর করার মামলা করেন থানায়। ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর নানা অভিযোগে অভিযুক্ত মাসুদ ও তার স্ত্রীর বিচারের দাবিতে মনুয়ারার পক্ষে ১৭ জন গ্রামবাসী সহকারী পুলিশ সুপারের কাছেও বিচার দাবি করেছিলেন।

২০২৪ সালের ১০ আগষ্ট মাসুদ রানার বিরুদ্ধে রায়পুর শহরের ট্রাফিক মোড়ে বাবুল বনিকের দোকানের সামনের অংশ জোরপূর্বক ফলের দোকান বসিয়ে দখলের অভিযোগ করা হয় সেনাক্যাম্পে। চলতি বছরের ৩১ জুলাই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জলিল মিয়ার বাড়ীর মাহবুবের রশিদ মুক্তারের পরিবারের উপর সশস্ত্র হামলা করে মাসুদসহ তার পরিবার ও লোকজন। আহত মুক্তার বাদি হয়ে মাসুদসহ তিনজনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে গত ১ আগষ্ট একই এলাকার দিনমজুর আবুল বাসার পাটোয়ারীর মেয়ে ও প্রবাসি সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল মামুনের স্ত্রী রাহিমা বেগমকে বেদম মারধর করে মাসুদ ও তার স্ত্রী কুসুম আক্তার। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে তারা ১৪ আগষ্ট জামিনে এসে হত্যাসহ বিভিন্ন ক্ষতি করার হুমকি দেয়ায় থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়। একই দিনে মাসুদসহ তার পরিবারের বিচারের দাবিতে ৫৭ জন গ্রামবাসী তাদের স্বাক্ষরে পুলিশ প্রশাসনের কাছে বিচারের দাবি জানিয়েছেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর একই এলাকার আল-আমিন নামের এক যুবককে মিথ্যা অভিযোগ তুলে ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারণা চালায় মাসুদ। এসব কেন করছেন জানতে চাইলে আল-আমিনের কাছে ৫০ হাজার চাঁদা দাবি করে মাসুদ। চাঁদা না দেয়ায় শহীদ কমিশনারের ফলের দোকানের ভেতরে আল-আমিনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে হত্যার চেষ্টা করে মাসুদসহ তার স্ত্রী কুশুম ও ছেলে আকাশ। এ ঘটনায় ৯ সেপ্টেম্বর মাসুদসহ তিনজনকে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকালে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী অভিযুক্ত মাসুদ, তার স্ত্রী কুশুম ও ছেলে আকাশের বিচারের দাবিতে থানার সামনে মানবন্ধন করা হয়েছে।

এছাড়াও মাসুদ, তার স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা ও গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি গণস্বাক্ষরে জানানো হয় সহকারী পুলিশ সুপারের কাছে। এর আগে ভুক্তভোগীরা ও গ্রামবাসী থানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন।

পৌরসভার দক্ষিণ কেরোয়া গ্রামের ৭ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহবুবের রশিদ মুক্তার বলেন, বিএনপি নেতা মাসুদ ও তার স্ত্রী বিএনপি নেত্রী কুশুম আক্তারে অত্যাচারে আবদুল জলিল মিয়ার বাড়ির ও এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। গ্রামের নিরীহ মানুষকে তুচ্ছ ঘটনায় মারধর ও মিথ্যা মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা না দিলে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলে না। একই অভিযোগ করেন, আল-আমিন নামের যুবক। তিনিও মাসুদের বিচার দাবি জানিয়েছেন।

রায়পুর পৌরসভার জ্বীনের মসজিদ সংলগ্ন এলাকার সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল মামুনের স্ত্রী রাহিমা বেগম অভিযোগ করে বলেছেন, বিএনপি নেতা মাসুদ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত। নিরীহ মানুষকে মাদকে জড়ানোর ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করে থাকে। তার বিরুদ্ধে শিশু ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, জমি দখল ও মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। তার স্ত্রী কুশুম আক্তারও মাদক ব্যাবসার কাজে জড়িত। বিএনপি করার কারনে প্রশাসন ও দলের নেতারা চুপ রয়েছেন। আমার ওপর হামলার ঘটনায় বিচার চাই।

একই গ্রামের আবুল কালাম বলেন, সামান্য ঝগড়াঝাটির ঘটনায় মাসুদ দল ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে মানুষের ক্ষতি করছে। মারধর করা সহ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

রায়পুর শহরের ট্রাফিক মোড়ে মুদি ব্যাবসায়ী বাবুল বনিক বলেন, আমার মুদি দোকানের সামনে যৌথভাবে ফল ব্যবসা দেয়ার জন্য চুক্তি হয়। কিন্তু মাসুদ বিএনপির ক্ষমতা দেখিয়ে একাই দখল করে নেয়। আমার ১০ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে মাসুদ। অবশেষে থানায় ও রায়পুর সেনা ক্যাম্পে মাসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ায় আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো ও হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

এসব ঘটনার সত্যতা জানতে বিএনপি নেতা মাসুদ ও তার স্ত্রী কুশুম আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বাড়ীর ও এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে তাদের জমি নিয়ে বিরোধ। তারা একজোট হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ, মামলা, স্বারকলিপি ও মানবন্ধন করেছেন। আমিও থানায় অভিযোগ ও মামলা দিয়েছি। সংবাদ সম্মেলন করে বিচার চেয়েছি।

এ প্রসঙ্গে রায়পুর থানা পুলিশের ওসি নিজাম উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, বিএনপি নেতা মাসুদ দম্পত্তির বিরুদ্ধে কয়েকটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান খাঁন বলেন, বিএনপি নেতা মাসুদ দম্পত্তির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।