‘ছাত্রদলের রাজনীতি আইসিইউতে, ভালো মানুষ ভবিষ্যতে বিএনপি করতে পারবে না’

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলের ভরাডুবি, ভোট বর্জন নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন একসময়ের ছাত্র সংগঠনটির ডাকসাইটে নেতা সানাউল হক নীরু। তিনি বলেছেন, ছাত্রদলের রাজনীতি আজ আইসিইউতে। এখন যেন পালিয়ে যাওয়ার পালা।

সাবেক এই ছাত্রনেতা মনে করেন, কমিটি বাণিজ্যসহ নানা কারণে দলের পরিস্থিতি খারাপ হওয়াতে আগামী দিনে কোনো ভালো মানুষ বিএনপির রাজনীতি করতে পারবেন না।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন। সানাউল হক নীরু লিখেছেন, একদিন কানার ভাই অন্ধরাও বিজয়ী হয়েছিল সানাউল হক নীরুর বদান্যতায় এবং মাহবুবুল হক বাবলুর রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে। নিরু-বাবলুর হাত ধরে ছাত্রদলের যে বিজয়ের পতাকা সারাদেশের প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একসময় উত্তোলিত হয়েছিল, এমনকি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু কলেজেও সে সময়ে ছাত্রদল বিজয়ী হয়েছিল, আজ তা অনেকাংশেই ক্ষয়িষ্ণু ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

ছাত্রদলের ছন্দপতনের কথা তুলে ধরে তিনি লিখেছেন, সেখান থেকেই শুরু ছন্দপতন। ছাত্রদলের নেতৃত্ব দখল করে নিল তেলবাজ, চাটুকার ও অযোগ্যরা। জন্ম নিল পকেট কমিটি ও কমিটি-বাণিজ্যের নতুন কালচার। আস্তে আস্তে শেষ হয়ে গেল ছাত্রদলের সংগ্রামী ঐতিহ্য। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পর ছাত্রদলের রাজনীতি নীতি-আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে পতিত স্বৈরাচার এরশাদ ও ভারতীয় দালালদের হাতে চলে গেল।

ডাকসুসহ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিয়ে তিনি আরও লেখেন, ১৯৯০-এর ডাকসু নির্বাচনের বিজয়ের মধ্য দিয়েই ঘটে শুভর বিদায় এবং অশুভ শক্তির উত্থান। নব্বইয়ের তথাকথিত মহানায়করা ডাকসু অফিসে বসে কালো তালিকার নামে দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্ল্যাকমেইল করে শত শত কোটি টাকা, বাড়ি, গাড়ি ও ফ্ল্যাট হাতিয়ে নেয়। এটুকুই ছাত্রদলের বিজয়ের প্রকৃত ইতিহাস। বাকিটা শুধু ফাঁকি। ন্যাচারাল জাস্টিস বলে একটা কথা আছে, একদিন ছাত্রদলের সারা দেশে স্লোগান ছিল মাহবুবুল হক বাবলুর রক্তমাখা শার্ট আমাদের বিজয়ের পতাকা।

সাবেক এই ছাত্রনেতা লিখেছেন, এরপর থেকে অশুভ শক্তির ধারাবাহিক উত্থান ঘটতে থাকে এবং ছাত্রদলের রাজনীতি আজ আইসিইউতে। এখন যেন পালিয়ে যাওয়ার পালা। আগামী দিনে কোনো ভালো মানুষ বিএনপির রাজনীতি করতে পারবেন না—এটা প্রায় নিশ্চিত। কমিটি-বাণিজ্য সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে, বিএনপির যে সকল নেতাকর্মী মামলা হামলা, জেল জুলুম হুলিয়া ও জীবন বাজি রেখে বিগত দিনে দলকে সার্ভিস দিয়েছে, সে সব ত্যাগীরা আজ কমিটিতে জায়গা পাচ্ছে না, বিতাড়িত ও বঞ্চিত।

আরও পড়ুনঃ মধ্যরাতে বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন-ভাঙচুর ও লুটপাট
বিএনপির তীব্র সমালোচনা করে নীরু লিখেছেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম যাদেরকে আমরা জেন-জি বলছি তারা প্রায় সাড়ে চার কোটি ভোটার বেশিরভাগ বিএনপিকে আর বিশ্বাস করছে না। বিএনপির গত ১৩ মাসের রাজনৈতিক চরিত্র, বক্তব্য ও অ্যাক্টিভিটি ছিল ভারতমুখী, যা তাদের শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য ও বিবৃতির মধ্য দিয়ে বারবার উঠে এসেছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত রাজনীতি ও নীতি আদর্শকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আপনারা খুব বেশিদূর এগোতে পারবেন না।

তিনি লিখেছেন, জনগণ বর্তমান বিএনপিকে আওয়ামী লীগের রিপ্লেসমেন্ট ও ভারতীয় হেজিমনি ফিরিয়ে আনতে এক ধরনের রাজনৈতিক টুলস হিসেবে দেখছে, ইতোমধ্যে যার প্রভাব পড়েছে ডাকসু ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের উপর। সুতরাং গত তিন যুগ ধরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভারত বিরোধী ঝাণ্ডাটা এই মুহূর্তে ছাত্রশিবিরের হাতে চলে গেছে।

ছাত্র সংসদ নির্বাচন বর্জনের সমালোচনা করে তিনি লিখেছেন, গত পনেরো বছর ধরে হামলা-মামলা ও জেল-জুলুমের শিকার ত্যাগী নেতৃত্ব আজ চরম হতাশ, সবকিছু থেকে বঞ্চিত। ছাত্র সংসদ নির্বাচন বয়কট করে বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব দেশ ও জনগণকে কি ম্যাসেজ দিতে চেয়েছে? বিএনপি সব সময়ই একটা নির্বাচনমুখী ও গণমানুষের দল, তাহলে কি আমরা ধরে নেব আজ যা শুরু হয়েছে এরপর কি স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন বয়কটের মধ্য দিয়ে বিএনপি তার ‘নির্ধারিত গন্তব্যের’ পথে হাঁটতে শুরু করবে? দিনশেষে এ প্রশ্ন এখন সবার ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।