জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের ঝুলতে দেখা যায় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ছাত্রজনতার ক্ষোভের মুখে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এবং সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত থেকে সরিয়ে ফেলা হয় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। ভেঙে ফেলা হয় শেখ মুজিবুর রহমানের হাজার হাজার মূর্তি, মুরাল ও ভাস্কর্য।
একইভাবে ভেঙে ফেলা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সামনে অবস্থিত, আওয়ামী সরকার প্রতিষ্ঠিত শেখ মুজিবের মুরাল, বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউট থেকে সরিয়ে ফেলা হয় শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ছবি। এমতাবস্থায় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এখনও ঝুঁকছে শেখ মুজিবের ছবি।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘যার নাম বিক্রি করে বিগত সতেরো বছর স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত ছিল, যার নাম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে দুই হাজার ছাত্রজনতাকে হত্যা করা হয়েছে সেই শেখ মুজিবের ছবি জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে কোথাও থাকতে পারে না।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সাবেক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জবি শাখার আহ্বায়ক ও ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) বর্তমান কেন্দ্রীয় সদস্য মাসুদ রানা বলেন, ‘৫ আগস্টের পর শেখ মুজিবের ছবি অপসারণের নির্দেশ অমান্য করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে এখনও সেই ছবি ঝুলে থাকা প্রমাণ করেছে প্রশাসনের ভেতরে আওয়ামী প্রভাবশালী চক্র এখনও সক্রিয়। এটি শুধু সরকারের সিদ্ধান্তের অবমাননা নয়, বরং এ দেশের গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এখনও শেখ মুজিবের ছবি অপসারণ না করে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থাকে নতুন করে ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা প্রশাসনের এটা খতিয়ে দেখা উচিত। আমরা অবিলম্বে এই ছবি অপসারণ করা এবং দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছি।’
জবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এটি অপ্রত্যাশিত। আমি জানি না তিনি কোন কোন সাংবিধানিক নীতি অনুসরণ করছেন। তিনি যদি সংবিধান অনুসরণ করেন তাহলে তিনি গণঅভ্যুত্থানকে অস্বীকার করতে চাইছেন এবং তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্বীকার করতে চাইছেন।’
শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘তিনি ভদ্রলোকী অজুহাত দেখাচ্ছেন। তাকে নির্দেশনা দিতে হবে কেন? জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদের যে সংগ্রাম, যে কষ্ট, যে অনুভূতি তাকে সম্মান দেখিয়ে তার উচিত শেখ মুজিবের ছবিটি নামিয়ে ফেলা।’
ছবি ঝুলিয়ের রাখার ব্যাখ্যা দিয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘দেখুন, আমি জুলাই অভ্যুত্থানকে স্বীকার করি। আমি শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম। ফেইসবুকে আমি তাদের পক্ষে কথা বলেছি। সেগুলো এখনও আছে। শেখ মুজিবের ছবি রাখা বা সরিয়ে ফেলার ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত কোন ইচ্ছা বা অনিচ্ছা নেই। আমি সাংবিধানিক নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সেটিকেই অনুসরণ করা চেষ্টা করছি। অনেক শিক্ষার্থী আমাকে ছবিটি সরিয়ে ফেলার জন্য বলেছিল। আমি তাদের বলেছি যে তারা নিজেরা যেন সরিয়ে ফেলে। আমি সরাতে পারবো না৷ আমার কাছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা আসেনি। উপাচার্য যদি নির্দেশ দেন তাহলে আমি আজই সরিয়ে ফেলতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিপ্লবের বিপরীতে প্রতিবিপ্লব ঘটে। আমি বলছি না ঘটবে, তবে ঘটতেও পারে৷ যদি ঘটে তাহলে যারা এখন শেখ মুজিবের ছবি সরিয়ে ফেলছে তাদের তখন কি হবে? তারা সাংবিধানিক নীতি লঙ্ঘন করেছে।’