কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর-সদর দক্ষিণ) সংসদীয় আসনে মনোনয়ন লাভ করে চমক সৃষ্টি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী। তার চমকে বিজয় হয়েছে সাবেক কুসিক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর। কারণ সাক্কু আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, মনিরুল হক চৌধুরী মনোনয়ন পেলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করবেন না। মনির চৌধুরীর মনোনয়নই তার ‘বিজয়’। এদিকে দীর্ঘ ১৭ বছর সংগঠনের হাল ধরে রেখে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে হতাশ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমিনুর রশীদ ইয়াছিন ও তার অনুসারীরা। স্থানীয়দের প্রশ্ন, বিএনপি কি ঐক্যবদ্ধ হবে? নাকি এক গ্রুপ অপর গ্রুপের বিজয়ে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে?
কুমিল্লার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন হলো কুমিল্লা-৬ সদর সংসদীয় আসন। আসনটিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীর মনোনয়নে নগরজুড়ে চমক সৃষ্টি হয়েছে। তিনি কুমিল্লা-১০ আসনের ভোটার ও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। সম্প্রতি আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে তিনি কুমিল্লা-৬ আসনে যুক্ত হন। যদিও এখানে মনির চৌধুরীর পৃথক বলয় এবং জনপ্রিয়তা রয়েছে।
এ আসনে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে মনোনয়ন প্রত্যাশায় সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা আমিনুর রশীদ ইয়াছিন। আবার ইয়াছিনের সঙ্গে চরম বিরোধ রয়েছে সাবেক কুসিক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর। তাই ইয়াছিন মনোনয়ন পেলে সাক্কু স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করার ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে রেখেছিলেন। এরই মাঝে সাক্কু নগরীতে বেশ কিছু প্রোগ্রাম ও গণসংযোগ করেছেন। এসব গণসংযোগে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, মনিরুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনি স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করবেন না। অন্য কেউ বিএনপির মনোনয়ন পেলে তিনি স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচনে লড়বেন। এরই মাঝে ২৬ অক্টোবর বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সাক্কু। এ সময় মনিরুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচন থেকে বিরত থাকবেন বলে মহাসচিবের কাছে প্রতিশ্রুতি দেন।
স্থানীয়রা জানান, আসনটিতে দীর্ঘদিন সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার ফলে আমিনুর রশিদ ইয়াছিনের একটি বলয় রয়েছে। মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় সোমবার রাতে তার অনুসারীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল এবং প্রতিবাদ সভা করেন। প্রার্থিতা ঘোষণার পর থেকেই ইয়াছিন সমর্থকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। অন্যদিকে প্রার্থী ঘোষণার পর মনিরুল হক চৌধুরীর মনোনয়নে সাক্কুর অনুসারীরা নগরীতে বিজয় মিছিল করেছেন।
স্থানীয়দের প্রশ্ন তবে কি বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হবে? নাকি ক্ষোভ এবং হতাশা থেকে দ্বন্দ্ব কোন্দল আরও বাড়বে?
কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, দলের কাছে আমি ঋণী হয়ে গেলাম। আগামী নির্বাচনে দলকে এ আসন উপহার দিয়ে আমি আমার ঋণ পরিশোধ করব।
তিনি বলেন, মনোনয়ন বঞ্চিত আমিনুর রশীদ ইয়াছিনের কাছে আমি যাব এবং তার প্রত্যেকটা অনুসারীর কাছে গিয়ে আমরা হাতে হাত মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত করব। আমি কোনোভাবেই এখানে কোন্দল রাখতে চাই না।
সাবেক কুসিক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, বিএনপির হাইকমান্ড এবার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মনিরুল হক চৌধুরী জনপ্রিয় এবং যোগ্য প্রার্থী। তাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে আমরা একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করব। এখানে অন্য কোনো ষড়যন্ত্র বিএনপির বিজয় ঠেকাতে পারবে না।
এদিকে কুমিল্লা সিটির সাবেক মেয়র ও বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু বলেছেন, কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরীকে সর্বোচ্চ ভোটে বিজয়ী করা হবে। মঙ্গলবার বিকালে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
সাক্কু বলেন, কুমিল্লা সদর আসনের ক্ষেত্রে বিএনপির হাইকমান্ড সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। সারা বাংলাদেশে যত আসন আছে, সবগুলো আসন থেকে বেশি ভোটে মনির ভাইকে পাশ করাব।
তিনি বলেন, মনির ভাই একজন যোগ্য নেতা। তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় আমি অনেক খুশি। দেশনায়ক তারেক রহমানকে কী বলে ধন্যবাদ দেব জানা নেই।
Bekar Barta